৫ উইকেটে ১৪০। এরপর বাকি ৫ উইকেটে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারলো কেবল ১০ রান। ফলে ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে চা বিরতির পর পরই (তৃতীয় সেশনে) মাত্র ১৫০ রানে অলআউট হয়ে গেলো বাংলাদেশ।
ভারতীয় পেসারদের তোপের মুখে প্রথম থেকেই ব্যাকফুটে ছিল বাংলাদেশ। ইশান্ত শর্মা, উমেষ যাদব, মোহাম্মদ শামির সঙ্গে ঘূর্ণি নিয়ে হাজির ছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। ফলে, অনায়াসেই ভারতের এই বোলিং লাইনআপের সামনে বালির বাধের মত ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। শামি ৩টি, যাদব, ইশান্ত এবং অশ্বিনরা নেন ২টি করে উইকেট। তাইজুল হয়েছেন রানআউট।
৯৯ রানে মুমিনুল আউট হওয়ার পর মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাধেন তার ভায়রা ভাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ১৬ রানের জুটি গড়ার পর বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হন তারা দু’জন। মূলতঃ রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মিডল স্ট্যাম্পের ওপর থাকা বলতে সুইপ করতে যান মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু বল ব্যাটে লাগেনি। সরাসরি বোল্ড হয়ে যান তিনি।
অশ্বিনের বলে কয়েকটি ক্যাচ মিস হওয়ার পর তিনি সরাসরি বোল্ড করে যেন সতীর্থ ফিল্ডারদের বলে দিলেন, তোমরা ক্যাচ ধরতে পারো না, তাতে কি! আমি এবার বোল্ডই করে দিলাম।
মুশফিকের সঙ্গে মিলে লিটন দাস গড়ে তোলেন ২৫ রানের জুটি। কিন্তু ভারতীয়দের সাঁড়াসি বোলিংয়ের সামনে সংগ্রামী ইনিংস খেলেও টিকতে পারলেন না মুশফিক। ১০৫ বল খেলে ৪৩ রান করে আউট হয়ে যান। দলীয় ১৪০ রানের মাথায় মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড আউট হন তিনি।
এরপর তাইজুল ইসলাম আর আবু জায়েদ রাহি গড়েন ৮ রানের জুটি। দলীয় ১৪৮ রানের মাথায় রানআউট হয়ে যান তাইজুল ইসলাম। ২ রান করে এবাদত হোসেন যখন উমেষ যাদবের বলে বোল্ড হলেন, তখনই শেষ হলো বাংলাদেশের ইনিংস। ৭ রানে অপরাজিত থেকে যান রাহী।
এর আগে ৩১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে যখন কঠিন বিপর্যয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং, তখনই হাল ধরার চেষ্টা করেন মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহীম। দু’জনের ব্যাটে ৬৮ রানের জুটি গড়ে ওঠে। তাতে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটাতে পারলেও শঙ্কা শেষ হয়ে যায়নি। কারণ, দলীয় ৯৯ রানের মাথায় ৪র্থ উইকেট হিসেবে সাজঘরে ফিরলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি।
৮০ বল মোকাবেলায় ৩৭ রান করে মাঠ ছাড়েন মুমিনুল। ৬টি বাউন্ডারির মার ছিল তার ব্যাটে। ৯৯ রানের মাথায় অধিনায়ককে হারানোর পর মাঠে নামেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
শুরুতে টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর প্রথম থেকেই ভারতীয় পেসারদের ইনসুইং আর আউটসুইংয়ে দিশেহারা বাংলাদেশের দুই ওপেনার। যে কারণে স্কোরবোর্ডে প্রথম রান যোগ করতেই তিন ওভার লেগে গিয়েছিল ইমরুল কায়েস আর সাদমান ইসলামের। তবে ভারতীয় পেসারদের বিষমাখানো বোলিংয়ের সামনে টিকতে পারেননি এই দুই ওপেনার। ১২ রানে বসিয়েই ইমরুল এবং সাদমানকে তুলে নেন দুই পেসার ইশান্ত শর্মা এবং উমেষ যাদব।
দ্রুত দুই ওপেনারকে হারিয়ে যখন ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ, তখন দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মুমিনুল হক এবং ব্যাটমসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন। কিন্তু এ দু’জন ১৯ রানের জুটি গড়ার পরই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে বাধ্য হন। ৩৬ বল খেলে ১২ রান করে মোহাম্মদ শামির বলে ফিরে যান মোহাম্মদ মিঠুন। এলবিডব্লিউর শিকার হন তিনি।
টস জিতে ব্যাট করতে নামার পরই হয়তো বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা বুঝতে পেরেছেন, তারা কি ভুলটাই না করে ফেলেছেন। এই উইকেটে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠানোর দারুণ একটা সুযোগ ছিল। কারণ, প্রথম ওভার থেকেই ইন্দোরের উইকেটে বলকে লাটিমের মত ঘোরাতে শুরু করেছে ভারতীয় পেসাররা।
এমনিতেই ভারতের তিন পেসার ইশান্ত শর্মা, উমেষ যাদব এবং মোহাম্মদ শামি রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। বলা হচ্ছে, টেস্টে সম্ভবত এই মুহূর্তে সেরা পেস অ্যাটাক রয়েছে বিরাট কোহলির হাতে। সেই পেসারদের বিপক্ষে ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামে হালকা ঘাসযুক্ত উইকেটে প্রথমে ব্যাট করতে নামার সিদ্ধান্তকে খুবই ‘সাহসী’ বলে মন্তব্য করেছেন সুনিল গাভাস্কার।
টসের পর ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলিও জানিয়েছেন, টস জিতলে এই উইকেটে প্রথমে বোলিংই নিতেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এই উইকেটে কিছুটা ঘাস রয়েছে। আর ঐতিহাসিকভাবে ইন্দোরে টেস্টের প্রথম দিনটা বোলারদের জন্যই বেশ উপযুক্ত। সুতরাং, টস জিতলেও আমরা বোলিং নিতাম। আমাদের দলে তিন পেসার রয়েছে। এই উইকেটটা তাদের জন্য একেবারেই উপযোগি। একই সঙ্গে তারা রয়েছে খুব ফর্মে। দ্বিতীয় দিন থেকেই এই উইকেটটি আবার ব্যাটিংয়ের জন্য তরতাজা হয়ে উঠবে। এ কারণেই আমরা বোলিংটাই প্রথমে করার চিন্তা করেছিলাম।’
এই তিন পেসারের সামনে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে প্রথম রান যোগ করতে লেগেছে তিন ওভার। কিন্তু চোখের পলকে সুইং করে ভেতরে ঢোকা কিংবা বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলকে মোকাবেলা করে কতক্ষণই বা টিকে থাকা যায়! টিকতে পারলেন না দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস এবং সাদমান ইসলামও।
শেষ পর্যন্ত ৬ষ্ঠ ওভারে গিয়ে, দলীয় ১২ রানের মাথায় ব্যাটের কানায় লাগিয়ে থার্ড স্লিপে আজিঙ্কা রাহানের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য হন ইমরুল কায়েস। বোলার ছিলেন উমেষ যাদব। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বলটা ছিল আউট সুইঙ্গার। বডি লাইনে বলটা পিচ করে আউট সুইংয়ে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বসেন ইমরুল। ফল যা হওয়ার তাই হলো। ৬ রানে ফিরলেন ইমরুল।
পরের ওভারের শেষ বলে ফিরে গেলেন সাদমান ইসলামও। এবার ইশান্ত শর্মা হলেন উইকেট শিকারী। তার বল ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে ঋদ্ধিমান সাহার হাতে জমা দিলেন সাদমান। তিনিও করেন ৬ রান।
‘ব্যালন ডি’অর নিয়ে ফিরছেন মেসি, বর্ণিল সাজে ক্যাম্প ন্যু’
: রোনালদো-ফন ডাইকের মতো আলোচনায় থাকা তারকাদের পেছনে ফেলে রেকর্ড ষষ্ঠবারের......বিস্তারিত