লিমন বাসার, বগুড়া: বগুড়ার চারমাথায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পৌরসভার অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে মার্কেট (লাল চিহ্নিত)। এ জন্য টার্মিনালের গণশৌচাগার ভাঙা হচ্ছে। এর ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে। ছবি : কালের কণ্ঠ
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে সারি সারি দোকানঘর। সেখানে রয়েছে দই, মিষ্টি, বেকারি, টিকিট কাউন্টার, বিকাশ, ফ্লেক্সিলোড ও ফলের দোকান। কিছুদিন আগে এই দোকানগুলো ছিল সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জায়গা দখল করে; কিন্তু চার লেন তৈরির জন্য গত ২৯ নভেম্বর সওজ উচ্ছেদ অভিযান চালায়। সে সময় বগুড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নওগাঁ সড়কের দুই পাশের ৫ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্যে চারমাথা বাস টার্মিনাল অংশের ৫০-৬০টি দোকানঘর ছিল। পরবর্তী সময়ে এই দোকান মালিকদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বাস টার্মিনালের ইজারাদার ইট দিয়ে স্থায়ী দোকানঘর নির্মাণ করেন। এ জন্য টার্মিনালের গণশৌচাগার ভাঙা হয়। গতকাল পর্যন্ত ১৭টি দোকানঘর নির্মাণ হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, এসব দোকান প্রতিটি ছয় থেকে আট লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদর থানা যুবলীগের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম। আর তাঁর সঙ্গে ছায়া হয়ে রয়েছেন এই গ্রুপের আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম মোহন।
গতকাল বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, নতুন তৈরি করা মার্কেটের ঘরের শেষ পর্যায়ের ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। সেখানে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে দই, মিষ্টি, বেকারি, টিকিট কাউন্টার, বিকাশ, ফ্লেক্সিলোড ও ফলের দোকাগুলো। মিজান নামের একজন দোকান কর্মচারী জানান, তাঁর মালিক নতুন তৈরি করা দোকানঘর ছয় লাখ টাকায় কিনেছেন আমিনুল ইসলামের কাছে থেকে। ক্রেতা সেজে জানতে চাইলে আরিফ নামের একজন জানান, এখন আট লাখেও দোকান নেই। সব বিক্রি হয়ে গেছে। টার্মিনালের ভেতরে নতুন করে দোকান নির্মাণ করার জন্য ইট, বালু, খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে।
বগুড়া পৌরসভার তথ্য অনুসারে বিগত বিএনপি সরকারের শাসনামলে ১৯৯১-৯২ সালে মাঝারি শহর অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে তিন একর জমির ওপরে এই টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। এখানে ছোটবড় মিলে দেড় শ গাড়ি রাখা যায়। শুরু থেকে এলাকার প্রভাবজনিত কারণে চারমাথা বাস টার্মিনাল ছিল সদর থানা যুবলীগের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম এবং তার বাবা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল লতিফ মণ্ডলের নিয়ন্ত্রণে। বিগত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই প্রভাব ধরে রেখেছেন তাঁরা। এ কারণে তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করার নেই এমন কথা বলেছেন বগুড়া পৌরসভার কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে জানতে বগুড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানকে মোবাইল ফোনে কল করে পাওয়া যায়নি।
বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদর থানা যুবলীগের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো দোকান বিক্রি করা হয়নি। বিক্রি করার তথ্য মিথ্যা। আর দোকান করার বিষয়টি পৌরসভাকে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে। এখন সেটি কাউন্সিলরদের সভা করে অনুমতি নেওয়া হবে। আর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ক্ষতির দিক বিবেচনায় রেখে সেখানে দোকানগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানালেও পরে আর কল রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল লতিফ মণ্ডল ও তাঁর ছেলে জেলা মোটোর মালিক গ্রুপের যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম। আর আমিনুলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার সুবাদে তাঁদের সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম। এই বাস টার্মিনালের ওপর দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১১ জেলার আট শতাধিক কোচ-বাস চলাচল করে। প্রতিদিন ৫০ টাকা টার্মিনাল (পৌর টোল) চাঁদা হিসেবে উঠে ৪০ হাজার টাকা। বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকা। এ জন্য টার্মিনাল দখলে মড়িয়া তাঁরা।
বগুড়া পৌরসভার তথ্য অনুসারে, বর্তমানে এই টার্মিনাল ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছে হাসান হোসেন এন্টারপ্রাইজ। এর মালিক নীলুফা ইয়াসমিন হচ্ছেন মোটর মালিক গ্রুপের যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলামের স্ত্রী। এর আগে ১৪২২-২৩ বঙ্গাব্দে দরপত্র ছাড়া বাস টার্মিনালের টোল তুলে নেন মোটর মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র সামসুদ্দিন শেখ হেলাল বলেন, ‘চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে মার্কেট নির্মাণ সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। সেখানে দোকানঘর নির্মাণ ও বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। আর ইজারা নিয়ে কিছু করতে হলেও দরপত্র করে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। যার কোনোটাই করা হয়নি। এই অবৈধ মার্কেট সম্পর্কে আমরা ইজারাদারকে নোটিশ করে ব্যবস্থা নেব। এ জন্য পৌরসভায় সভা আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
‘স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হলো যাদের লাশ’
: রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহদের......বিস্তারিত