আমতলী ও তালতলী প্রতিনিধি ॥ জলবায়ু পরিবর্তন ও বনদস্যুদের ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে টেংরাগিরি বনাঞ্চল। এতে হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। বিপন্ন হচ্ছে প্রাণীকূল। সাগরের প্রচ- ঢেউয়ের তোড়ে তীর ভেঙে সাগরে বিলীন হচ্ছে বনাঞ্চল। শ্বাসমূলীয় গাছগুলোতে পলি জমে ও ঢেউয়ের কারণে গোড়ার মাটি-বালু সরে বনাঞ্চলের গাছ মরে যাচ্ছে। বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার তালতলী উপকূলীয় সংরতি বনাঞ্চল নিদ্রাসকিনা, নিশানবাড়িয়া ও নলবুনিয়ার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি টেংরাগিরি। টেংরাগিরি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য বা ফাতরান বন (ঞবহমৎধমরৎর রিষফষরভব ংধহপঃঁধৎু)। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা টেংরাগিরি ১৯২৭ সালের পূর্বে সুন্দরবনের অংশ ছিল। ১৯২৭ সালের বন আইন অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার এটিকে সংরতি বনাঞ্চল ঘোষণা করে। পরে ১৯৬৭ সালে এটিকে টেংরাগিরি বনাঞ্চল হিসেবে নামকরণ করা হয়। ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর ৪০৪৮.৫৮ হেক্টর জমি নিয়ে গঠিত হয় টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা তিনদিকে সাগর ও বান্দ্রা খাল, মেরজেআলীর খাল, সিলভারতলীর খাল, ফেচুয়ার খাল, গৌয়মতলার খাল, কেন্দুয়ার খাল, সুদিরের খাল, বগীর দোন খাল ও চরের খাল-এ নয়টি ক্যানেল (খাল) বেষ্টিত এ বনাঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দের্য্যরে অপরূপ লীলাভূমি এ বনাঞ্চলের সাগর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ ও মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। কেওড়া, গরান, ওডা, জাম, ধুন্দল, সুন্দরী, বাইন, করমচা, বলই, তাল, কাঁকড়া, বনকাঁঠাল, রেইনট্রি, হেতাল ও তাম্বুলকাটা প্রভৃতি শ্বাসমূলীয় গাছ হচ্ছে এ বনের প্রধান প্রাণ। সুন্দরবনের পর এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন। এই সংরতি বনে রয়েছে হাজার প্রজাতির প্রাণী ও প্রায় ৪০ প্রজাতির সাপ। জলবায়ু পরিবর্তন ও বনদস্যুদের ছোবলে পড়ে ধীরে ধীরে উজাড় হচ্ছে টেংরাগিরি সংরতি বনাঞ্চল। বনদস্যুরা বনরক্ষীদের সাথে যোগসাজশে গহীন বনের সতেজ গাছ কেটে নিচ্ছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্বাসমূলে বালু জমে ও প্রচ- ঢেউয়ে গোড়ার মাটি-বালু সরে গিয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, টেংরাগিরি সংরতি বনাঞ্চলের নলবুনিয়া, নিশানবাড়িয়া, আশারচর ও নিদ্রা-সখিনা এলাকায় দূর থেকে দেখতে অপরূপ ঘন বন মনে হলেও বনদস্যুদের ছোবলে ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেছে। সাগর সংলগ্ন কয়েক কিলোমিটার এলাকার বনের গাছ স¤পূর্ণ উজাড় হয়ে গেছে। অসংখ্য গাছের বাকল ও ডালপালা ছেঁটে ফেলায় সে সকল গাছ মরে যাচ্ছে। নিদ্রা ও আশারচর এলাকায় কয়েক হাজার গাছ কেটে সাবাড় করার পর পড়ে আছে সে সব গাছের গোড়া। সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে অসংখ্য গাছের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে শিকড় বের হয়ে গেছে। এছাড়া ভাঙনের কবলে পড়ে অনেক গাছ সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জেলেরা জানান, নিদ্রা, সখিনা, আশারচর, নলবুনিয়া বনসংলগ্ন গ্রামগুলোতে ২০-২৫ গ্রুপের সক্রিয় বনদস্যু ও চোর চক্র রয়েছে। এরা বনরীদের সাথে যোগসাজশে গহীন বনের বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তারা আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডরে অসংখ্য গাছ মরে গেছে। তারপর আর গাছ রোপণ করা হয়নি। বনভূমি রায় শিগগিরই কার্যকর পদপে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তারা। পর্যটকরা জানান, দ্রুত এ বনাঞ্চল রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সখিনা বিটের বিট কর্মকর্তা জাহিদ প্রামাণিক বলেন, টেংরাগিরি বনের গাছ মরে যাওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। সাগরের ঢেউয়ের কারণে পাড় ভেঙে বনাঞ্চলের অনেক গাছ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। তবে তিনি গাছ কেটে সাবাড় করার বিষয়টি অস্বীকার বলেন, কাঠ চুরির সঙ্গে বন বিভাগের কমকর্তা-কর্মচারীদের কোন যোগসাজশ নেই। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোঃ আলমগীর কবির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে অনিয়মিত বর্ষণ ও অতিবর্ষণ হচ্ছে। যার ফলে নদীসমূহের ঊর্ধ্ব অববাহিকায় অধিকমাত্রায় ভূমি ক্ষয় হচ্ছে। যা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের উদ্ভিদের জীবন চক্রের স্বাভাবিক পর্যায়াবর্তনকে (সাকসেশন) সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত করছে। পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) অজিত কুমার রুদ্র বলেন, শ্বাসমূলীয় গাছ ও টেংরাগিরি বনাঞ্চল রক্ষায় বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনা টিম কাজ করছে। বনরক্ষীদের যোগসাজশে বনাঞ্চলের গাছ কেটে নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, সাগর পাড়ের কিছু গাছ জেলেরা চুরি করে কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।
‘বরিশালে ৫ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠানমালা’
: মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বরিশালে......বিস্তারিত